Summary
এ সূরার নাম সূরা তাকাসুর, যা ১০২তম সূরা এবং এর অর্থ প্রাচুর্যের প্রতিযোগিতা। এটি মক্কা নগরীতে অবতীর্ণ হয় এবং এর আয়াত সংখ্যা ৮টি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, সূরা তাকাসুর পাঠ করা এক হাজার আয়াত তিলাওয়াত করার সমান।
এই সূরায় ধন-সম্পদের প্রতি মানুষের মোহ ও প্রতিযোগিতা সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছে। মানুষ প্রাচুর্য লাভের জন্য প্রতিযোগিতায় লিপ্ত থাকে এবং মৃত্যুর আগে আখিরাতের জন্য প্রস্তুতি নেয় না। মানুষের উচিত আখিরাতকে প্রাধান্য দেওয়া, কারণ সেখানে সাফল্য ও কল্যাণ অপেক্ষা করে।
মৃত্যুর পরে মানুষ আখিরাতের সত্যতা উপলব্ধি করবে, কিন্তু তখন কিছু করার সময় থাকবে না। দুনিয়ার লোভের জন্য তাকে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হতে হতে পারে।
শিক্ষা:
- সম্পদের প্রতি মোহাচ্ছন্ন থাকা উচিত নয়।
- সম্পদের প্রাচুর্য আখিরাত ভুলিয়ে দেয়।
- অন্যায়ভাবে ধন-সম্পদ উপার্জনকারী জাহান্নামে যাবে।
- আখিরাতে সকল কাজের হিসাব হবে।
সুতরাং, আমাদের উচিত বৈধভাবে ধন-সম্পদ উপার্জন করা এবং আল্লাহর নির্দেশনা মেনে খরচ করা।
এ সূরার প্রথম আয়াতে বর্ণিত তাকাসুর শব্দ থেকে এ সূরার নামকরণ করা হয়েছে সূরা তাকাসুর। এটি পবিত্র কুরআনের ১০২তম সূরা। এর অর্থ প্রাচুর্যের প্রতিযোগিতা। এটি পবিত্র মক্কা নগরীতে অবতীর্ণ হয়। এর আয়াত সংখ্যা ৮টি। রাসুলুল্লাহ (সা.) একদা সাহাবিগণকে বলেন, তোমাদের মধ্যে এমন ক্ষমতা কারও নেই যে সে দৈনিক এক হাজার আয়াত তিলাওয়াত করবে। উত্তরে তাঁরা বললেন, হ্যাঁ এক হাজার আয়াত পাঠ করার শক্তি কয়জনেরই বা আছে? অতঃপর রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘তোমাদের কেউ কি সূরা তাকাসুর পাঠ করতে পারবে না? উল্লেখ্য, প্রতিদিন এই সূরা একবার পাঠ করা এক হাজার আয়াত তিলাওয়াত করার সমান।’ (মাযহারি)
শানে নুযুল
কুরাইশের শাখা গোত্র ছিল বনু আবদি মানাফ, বনু কুসাই ও বনু সাহম। এদের প্রত্যেক গোত্র অপর গোত্রকে লক্ষ্য করে বলত, কী নেতৃত্ব, কী ক্ষমতা কিংবা জনসংখ্যা, সব দিক থেকেই আমরা তোমাদের উপরে। এতে প্রথমে বনু আবদি মানাফই সবার উপরে প্রমাণিত হলো। শেষে সবাই বলল, আমাদের মধ্যে যারা মারা গেছে তাদেরকেও হিসাব করব। কাজেই তারা কবরস্থানে গিয়ে হাজির হলো এবং কোনটা কার কবর তা বলে গুনতে শুরু করল। এবার বনু সাহমের সংখ্যায় তিন পরিবার বেশি হলো। কেননা, জাহিলি যুগে তাদের জনসংখ্যা বেশি ছিল। এই পরিপ্রেক্ষিতে সূরাটি নাজিল হয়।
ব্যাখ্যা
এ সূরায় ধন-সম্পদের মোহ ও প্রতিযোগিতা সম্পর্কে মানুষকে সতর্ক করা হয়েছে। মানুষ স্বভাবতই ধন-সম্পদ, টাকা-পয়সা ইত্যাদির প্রতি লোভী। প্রাচুর্য লাভের জন্য পরস্পর প্রতিযোগিতায় লিপ্ত থাকা অবস্থাতেই মানুষের মৃত্যু এসে যায়। অথচ সে মৃত্যুর-পরবর্তী জীবনের জন্য কোনো প্রস্তুতিই নিতে পারে না। কিন্তু এরূপ করা ঠিক নয়। কেননা, ধন-সম্পদ হলো ক্ষণস্থায়ী বিষয়। এগুলোর প্রতি মোহ মানুষকে আচ্ছন্ন করে রাখে। অথচ আখিরাতের সাফল্য ও কল্যাণ এগুলোর তুলনায় কতই না উত্তম। মানুষের উচিত দুনিয়ার তুলনায় আখিরাতকে প্রাধান্য দেওয়া। মানুষ যদি আখিরাতের বাস্তবতাকে উপলব্ধি করত, তবে কখনো দুনিয়ার প্রাচুর্যের প্রতি আকৃষ্ট হতো না।
মৃত্যুর পর মানুষ আখিরাতকে বুঝতে পারবে। আখিরাতের নানা বিষয় প্রত্যক্ষ করবে। অথচ সে তখন কিছুই করতে পারবে না। বরং দুনিয়ায় প্রাপ্ত নিয়ামত সম্পর্কে সে জিজ্ঞেসিত হবে। দুনিয়ার লোভ-লালসা ও অন্যায়- অনৈতিকতার জন্য সে জাহান্নাম প্রত্যক্ষ করবে।
শিক্ষা
এ সূরা থেকে আমরা বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের শিক্ষা লাভ করি। যেমন:
১ . সম্পদের প্রাচুর্যের প্রতি মোহাচ্ছন্ন থাকা উচিত নয়।
২. সম্পদের প্রাচুর্য মানুষকে আখিরাত ভুলিয়ে দেয়।
৩. অন্যায়ভাবে ধন-সম্পদ উপার্জনকারী জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে।
৪. আখিরাতে সকল কাজের হিসাব নেওয়া হবে ।
অতএব, আমরা ধন-সম্পদের প্রতি লোভ-লালসা করব না। বরং বৈধভাবে প্রয়োজনমতো ধন-সম্পদ উপার্জন করব। আর আল্লাহ তা'আলার নির্দেশনামতো খরচ করব। অন্যায়ভাবে ধন-সম্পদ প্রদর্শনের প্রতিযোগিতা করব না।